!-- your other meta element -->
বিশ্বজুড়ে আবারও পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার দামামা বেজে উঠেছে। পরাশক্তিগুলো একদিকে যেমন তাদের পুরোনো অস্ত্র আধুনিকীকরণ করছে, তেমনি অন্যদিকে নতুন অস্ত্র তৈরির দিকেও ঝুঁকেছে। শীতল যুদ্ধের পর কয়েক দশক ধরে পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা কমতে থাকলেও সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় সেই ধারা এখন উল্টো পথে হাঁটছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এই উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে।
এসআইপিআরআইর পরিচালক ড্যান স্মিথ সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘শীতল যুদ্ধের পর আমরা পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যায় লাগাতার পতন দেখেছিলাম। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সেই প্রবণতা এখন থেমে গেছে এবং পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখা পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে মোট পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১২,২৪১টি। এর মধ্যে প্রায় ৯,৬১৪টি অস্ত্র সামরিক ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যা যেকোনো মুহূর্তে ব্যবহার করা সম্ভব।
এই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে চীন। দেশটি গত এক বছরে তাদের অস্ত্রাগারে প্রায় ১০০টি নতুন পারমাণবিক অস্ত্র যুক্ত করেছে, যার ফলে তাদের মোট অস্ত্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০০টিতে। ড্যান স্মিথের মতে, চীন যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে আগামী সাত-আট বছরের মধ্যে তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার চেয়ে কম হলেও চীনকে বিশ্বমঞ্চে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
অন্যদিকে, পারমাণবিক অস্ত্রের সবচেয়ে বড় দুই শক্তিধর দেশ রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিশাল অস্ত্রাগার আধুনিকীকরণে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। যুক্তরাজ্য তাদের অস্ত্রের সংখ্যা ২২৫ থেকে বাড়িয়ে ২৬০ করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। ফ্রান্সও তাদের ২৯০টি অস্ত্রের আধুনিকীকরণে হাত দিয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানও পিছিয়ে নেই। উভয় দেশই নতুন ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরিতে কাজ করছে। ধারণা করা হয়, ভারতের কাছে প্রায় ১৮০টি এবং পাকিস্তানের কাছে প্রায় ১৭০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এছাড়া, উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে জাতীয় নিরাপত্তার কেন্দ্রে রেখেছে এবং তাদের কাছে প্রায় ৫০টি অস্ত্র রয়েছে। ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্রের কথা স্বীকার না করলেও, তারাও নিজেদের অস্ত্রাগার আধুনিক করছে এবং তাদের কাছে প্রায় ৯০টি অস্ত্র থাকতে পারে বলে মনে করা হয়।
এসআইপিআরআই পরিচালক ড্যান স্মিথ সতর্ক করে বলেন, এই নতুন প্রতিযোগিতা কেবল অস্ত্রের সংখ্যা বাড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি হবে একটি প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা, যেখানে মহাকাশ, সাইবারস্পেস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি পারমাণবিক যুদ্ধের সিদ্ধান্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাতে চলে যায়, তবে মানব সভ্যতা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে।’