যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব জ্বালানি সহযোগিতা এবং বেসামরিক পারমাণবিক প্রযুক্তি বিষয়ে একটি প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছে। রবিবার (১৩ এপ্রিল) সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন মার্কিন জ্বালানি সচিব ক্রিস রাইট।
বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তির পথে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব
by আন্তর্জাতিক ডেস্কPublished: 14 April 2025Last Updated: 14 April 2025
যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব জ্বালানি সহযোগিতা এবং বেসামরিক পারমাণবিক প্রযুক্তি বিষয়ে একটি প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছে। রবিবার (১৩ এপ্রিল) সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন মার্কিন জ্বালানি সচিব ক্রিস রাইট।
flag saudi arabia and usa
সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা
রাইট জানান, দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক সহযোগিতার বিস্তারিত বিবরণ চলতি বছরের শেষ নাগাদ প্রকাশ করা হবে। এই সহযোগিতার প্রধান লক্ষ্য সৌদি আরবে একটি বাণিজ্যিক পারমাণবিক বিদ্যুৎ শিল্প প্রতিষ্ঠা করা এবং এই বছরই এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে অবশ্যই একটি ১২৩ পারমাণবিক চুক্তি হবে।’ ওয়াশিংটন রিয়াদের সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক শিল্প উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার প্রত্যাশা করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আরব নিউজের এক প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন এই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, উভয় দেশ প্রধান জ্বালানি খাতগুলোতে সহযোগিতা করবে, যেখানে ‘মার্কিন প্রযুক্তি এবং অংশীদারিত্ব মূল ভূমিকা পালন করবে’। তিনি সৌদি আরবের সৌর সম্পদের প্রাচুর্য এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির সুযোগের কথাও তুলে ধরেন। রাইট জ্বালানি খাতের কার্যকর উন্নয়নে সৌদি আরবের গৃহীত পদ্ধতির প্রশংসা করে বলেন, এটি সকল প্রকার জ্বালানি উৎসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে এবং অভিন্ন স্বার্থ খতিয়ে দেখতে সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এবং জ্বালানি মন্ত্রী প্রিন্স আব্দুল আজিজ বিন সালমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রাইট ও তার প্রতিনিধিদল।
তিনি জানান, সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় জ্বালানি সহযোগিতা, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, শিল্প উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
মার্কিন বাণিজ্য নীতি ও শুল্ক প্রসঙ্গে রাইট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৃহত্তর অর্থনৈতিক এজেন্ডার কথা উল্লেখ করে বলেন, শুল্ক একটি বৃহত্তর কৌশলের অংশ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) দৃঢ়ভাবে মনোনিবেশ করেছেন আমাদের বাণিজ্যিক অংশীদাররা মার্কিন পণ্যের জন্য একই রকম উন্মুক্ততা প্রদান করছে কিনা, তা নিশ্চিত করার ওপর।’
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের লক্ষ্য হলো ন্যায্য বাণিজ্যের মাধ্যমে মার্কিন রপ্তানি বাড়ানো এবং একইসঙ্গে শক্তিশালী আমদানি ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বজায় রাখা। গত দুই দশকে জ্বালানি-নির্ভর শিল্পের আউটসোর্সিং মোকাবেলা করা এবং সেই চাকরিগুলো আমেরিকায় ফিরিয়ে আনাও তার এজেন্ডার অংশ বলে তিনি জানান।
রাইট আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগকারী শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হবে, যা উভয় দেশের অর্থনীতি এবং আমেরিকান শ্রমিক শ্রেণির জন্য লাভজনক হবে।
বর্তমান তেলের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে আগামী চার বছরে গড় জ্বালানির দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, “আপনি যদি সরবরাহ বাড়ান, তাহলে প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পায় এবং দাম কমে আসে।” বিনিয়োগের বাধা হ্রাস এবং অবকাঠামো উন্নয়নের উপর বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে জ্বালানি সরবরাহের খরচ কমে আসবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
রাইট বিশ্বব্যাপী জ্বালানি চাহিদা বৃদ্ধি এবং সৌদি আরবের জ্বালানি উৎপাদন ক্ষমতা সম্প্রসারণের আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন, বিশেষ করে বাণিজ্যিক পারমাণবিক বিদ্যুতের মাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যিক পারমাণবিক বিদ্যুতের প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রেই বিকশিত হয়েছিল। সৌদি আরবে একটি বাণিজ্যিক পারমাণবিক বিদ্যুৎ শিল্প গড়ে তোলার জন্য আমরা আমাদের আলোচনা অব্যাহত রাখছি।’ তিনি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সৌদি আরবের নিজস্ব ইউরেনিয়াম সম্পদকে একটি প্রাকৃতিক সুবিধা হিসেবে দেখেন।
বিশ্ব জ্বালানির ভবিষ্যৎ নিয়ে রাইট দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং টেকসই বিনিয়োগের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, চলমান মার্কিন-সৌদি সহযোগিতা উভয় দেশ এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে পারে।