শিরোনাম:

আবার ক্ষমতা পাবো তথন কোথায় যাবে

দুই সন্তান হত্যার দায় স্বীকার করলেন মা

রাশিয়ার হুঁশিয়ারি: টরাস ক্ষেপণাস্ত্র দিলে সরাসরি ইউক্রেন-যুদ্ধে জড়াবে জার্মানি

১০ লাখ টাকার চেক সঙ্গে সোনার মেডেল, ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে প্রিয় শিক্ষককে বিদায়

চার মাসের সন্তানকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে মোবাইল কিনলেন মা

নিজ দেশের নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিনের পক্ষে অনঢ় কে এই দুঃসাহসী নারী

ডেইলি রিপোর্টঃ
প্রকাশিত : এপ্রিল ১৫, ২০২৫

ব্রিটিশ সরকারের পররাষ্ট্রনীতির ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সংকট ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে ‘সমতা’র চেয়ে হীন ‘স্বার্থ’কে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। কিন্তু এই ধারা ভেঙে সাহসিকতার সঙ্গে ফিলিস্তিনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে ব্রিটিশ রাজনীতিতে এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এমিলি থর্নবেরি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের পররাষ্ট্রবিষয়ক বাছাই কমিটির বর্তমান চেয়ার ও লেবার পার্টির সিনিয়র এমপি তিনি।

ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সেই সম্পর্কের কারণেই দীর্ঘকাল ধরে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতি ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর চালানো দমন-পীড়ন, জমি দখল ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বরাবরই নীরব থেকেছে। কিন্তু এমিলি থর্নবেরি, যিনি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের প্রবল সমর্থক, এই অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে বারবার পার্লামেন্টে, গণমাধ্যমে এবং রাজনৈতিক পরিসরে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে জোরালো কণ্ঠস্বর হিসেবে উঠে এসেছেন।

অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের ধারাবাহিক সামরিক অভিযানে হাজার হাজার নিরপরাধ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও ইসরায়েলের এই আক্রমণকে ‘সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। এমিলি থর্নবেরি এই প্রেক্ষাপটেই স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘আমরা আর চুপ থাকতে পারি না, ইতিহাস আমাদের বিচার করবে।’ তিনি বারবার বলেছেন, এই নৃশংসতা শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নয়, এটি একটি মানবিক বিপর্যয়, যার বিরুদ্ধে নৈতিক অবস্থান নেয়া জরুরি।

ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাজ্যের একচোখা সমর্থন এবং ফিলিস্তিনের অধিকারের বিষয়ে নীরবতা-এই দ্বিমুখী নীতির বিরুদ্ধেই প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন এই ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ।

তিনি যুক্তরাজ্যের এই নতজানু পররাষ্ট্রনীতিকে ‘নৈতিক পরাজয়’ হিসেবে ধিক্কার জানিয়েছেন। তার মতে, যুক্তরাজ্য যদি সত্যিই গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইনের পক্ষে দাঁড়াতে চায়, তাহলে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে সেই অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।

থর্নবেরির মতে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি কেবল প্রতীকি নয়, বরং এটি একটি কূটনৈতিক অস্ত্র, যা ইসরায়েলের দখলদার মনোভাবের বিরুদ্ধে বিশ্বমঞ্চে একটি তীব্র প্রতিবাদ হিসেবে কাজ করবে। এটি ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মপরিচয়, স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তার জন্য একটি ন্যূনতম এবং আবশ্যকীয় স্বীকৃতি। তিনি আরও যুক্তি দিয়েছেন, ব্রিটেন ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, তাহলে একইভাবে ফিলিস্তিনকেও স্বীকৃতি না দেয়ার কোনো ন্যায্যতা নেই।

পার্লামেন্টে বিল উত্থাপন, গণমাধ্যমে সরব উপস্থিতি, বেসরকারি প্রস্তাবনা এবং দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে থর্নবেরি তার অবস্থান স্পষ্ট করে তুলেছেন। তিনি লেবার পার্টির মধ্যেও একটি শক্তিশালী প্রভাব তৈরি করেছেন, যেখানে অনেক এমপি এখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির পক্ষে সরব হচ্ছেন।

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে চাপের মুখে যুক্তরাজ্য: ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাজ্যের ওপর চাপ বাড়ছে। আসছে জুনে জাতিসংঘের এক সম্মেলনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃত দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য যেন ফ্রান্সকে অনুসরণ করে— এই দাবি পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে তুলে ধরেছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের লেবার পার্টির এমপিরা। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন এই থর্নবেরি।

জাতিসংঘের নিউইয়র্ক সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের সহ-আয়োজক ফ্রান্স ও সৌদি আরব। মাখোঁ এরই মধ্যে বলেছেন, এই সম্মেলন একটি নির্ধারক মুহূর্ত হিসেবে গুরুত্ব পাওয়া উচিত।

এ প্রসঙ্গে থর্নবেরি বলেন, যুক্তরাজ্যের জন্য ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার এখনই সময়। আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে, ফরাসিদের সঙ্গে মিলে এটা করতে হবে। অনেক দেশ আমাদের পথ চেয়ে বসে আছে; তারা অপেক্ষা করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমা বিশ্ব শিগগির পদক্ষেপ না নিলে, একদিন হয়তো স্বীকৃতি দেয়ার মতো কোনো ফিলিস্তিনি আর তাদের মুক্ত ভূখণ্ড বলে অবশিষ্ট কিছুই থাকবে না।’

এমিলি থর্নবেরি শুধু একজন রাজনীতিক নন, বরং একজন বিবেকবান কণ্ঠস্বর, যিনি রাষ্ট্রীয় কূটনীতির মুখোশ সরিয়ে বাস্তব মানবিক সংকটের দিকে দৃষ্টি দিতে অপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির পক্ষে তার এ অবস্থান শুধুই একটি রাজনৈতিক দাবি নয়, বরং একটি নৈতিক আন্দোলনের অংশ। তার এই সাহসী ভূমিকা আজকের বিশ্বে ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের পক্ষে এক মূল্যবান সাক্ষ্য হয়ে থাকবে।

পূর্ববর্তী সংবাদ পরবর্তী সংবাদ
সর্বশেষ সংবাদ
  • সর্বাধিক পঠিত